৪১. বিসর্গ (ঃ ) ব্যবহার:
বিসর্গ একটি বাংলা বর্ণ—এটি কোনো চিহ্ন নয়। বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বিসর্গ (ঃ) হলো অঘোষ 'হ্'-এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি। 'হ'-এর উচ্চারণ ঘোষ কিন্তু বিসর্গ (ঃ)-এর উচ্চারণ অঘোষ। বাংলায় ভাষায় বিস্ময়াদি প্রকাশে বিসর্গ (ঃ )-এর উচ্চারণ প্রকাশ পায়। যেমন— আঃ, উঃ, ওঃ, ছিঃ, বাঃ । পদের শেষে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার হবে না।
যেমন— ধর্মত, কার্যত, আইনত, ন্যায়ত, করত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদি। পদমধ্যস্থে বিসর্গ ব্যবহার হবে। যেমন— অতঃপর, দুঃখ, স্বতঃস্ফূর্ত, অন্তঃস্থল, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
শব্দকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশে বিসর্গ ব্যবহার করা হলেও আধুনিক বানানে ডট ( . ) ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন— ডাক্তার>ডা., ডক্টর>ড., লিমিটেড> লি. ইত্যাদি। বিসর্গ যেহেতু বাংলা বর্ণ এবং এর নিজস্ব ব্যবহার বিধি আছে—তাই এ ধরনের বানানে (ডাক্তার>ডা., ডক্টর>ড., লিমিটেড> লি.) বিসর্গ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ বিসর্গ যতিচিহ্ন নয়।
[সতর্কীকরণ: বিসর্গ (ঃ)-এর স্থলে কোলন ( : ) কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। যেমন— অত:পর, দু:খ ইত্যাদি। কারণ কোলন ( : ) কোনো বর্ণ নয়, চিহ্ন। যতিচিহ্ন হিসেবে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার যাবে না। যেমন— নামঃ রেজা, থানাঃ লাকসাম, জেলাঃ কুমিল্লা, ১ঃ৯ ইত্যাদি।]
বিসর্গসন্ধি:
বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম :
১. র্ -জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়। উচ্চারণে র্ বজায় থাকে। যেমন— অন্তর>অন্তঃ+গত=অন্তর্গত ( অন্তোর্গতো)।
২. স্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়। উচ্চারণে স্ বজায় থাকে। যেমন : নমস্ > নমঃ + কার = নমস্কার ( নমোশ্কার্)।
বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় : ১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে; ২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে।
১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি:
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়। যেমন—
ততঃ + অধিক = ততোধিক
যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ
বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক
খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, আ, উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়। যেমন—
পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার
প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি
পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (র্) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমন—
র-জাত বিসর্গ : র্
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত
পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম
অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান
পুনঃ + বার = পুনর্বার
অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত
পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন
স-জাত বিসর্গ : ও
মনঃ + গত = মনোগত
সদ্যঃ + জাত = সদ্যোজাত
তিরঃ + ধান = তিরোধান
তপঃ + বন = তপোবন
অধঃ + মুখ = অধোমুখ
মনঃ + যোগ = মনোযোগ
মনঃ + রম = মনোরম
মনঃ + লোভা = মনোলোভা
মনঃ + হর = মনোহর
খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমন—
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয়
দুঃ + তর = দুস্তর
নিঃ + তেজ = নিস্তেজ
ইতঃ + তত = ইতস্তত
দুঃ + থ = দুস্থ
গ. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমন—
নিঃ + অবধি = নিরবধি
নিঃ + আপদ = নিরাপদ
নিঃ + গত = নির্গত
নিঃ + ঘণ্ট = নির্ঘণ্ট
নিঃ + বাক = নির্বাক
নিঃ + ভয় = নির্ভয়
আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব
আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ
দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা
দুঃ + আচার = দুরাচার
দুঃ + গতি = দুর্গতি
দুঃ + বোধ = দুর্বোধ
প্রাদুঃ + ভাব = প্রাদুর্ভাব
দুঃ + মর = দুর্মর
দুঃ + যোগ = দুর্যোগ
দুঃ + লভ = দুর্লভ
ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথমে ই-কার থাকলে তা ঈ-কার হয়। যেমন—
নিঃ + রব = নীরব
নিঃ + রস = নীরস
নিঃ + রোগ = নীরোগ
ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়। যেমন—
নমঃ + কার = নমস্কার
তিরঃ + কার = তিরস্কার
পুরঃ + কার = পুরস্কার
ভাঃ + কর = ভাস্কর
চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়। যেমন—
নিঃ + কাম = নিষ্কাম
নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ
নিঃ + ফল = নিষ্ফল
বহিঃ + কার = বহিষ্কার
চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ
চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ
ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না। যেমন—
প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া
অন্তঃ + করণ = অন্তঃকরণ
৪২. ম-ফলা, ব-ফলার ও য-ফলার উচ্চারণ:
ম-ফলার উচ্চারণ:
▓ পদের প্রমে ম-ফলা থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন— শ্মশান (শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্)।
কখনো কখনো ‘ম’ অনুচ্চারিত থাকতে ও পারে। যেমন— স্মৃতি (সৃতি বা সৃঁতি)।
▓ পদের মধ্যে বা শেষে ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে সে বর্ণের দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন— আত্মীয় (আত্তিঁয়), পদ্ম (পদ্দোঁ), বিস্ময় (বিশ্শঁয়), ভস্মস্তূপ (ভশ্শোঁস্তুপ্), ভস্ম (ভশ্শোঁ), রশ্মি (রোশ্শিঁ)।
▓ গ, ঙ, ট, ণ, ন, বা ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে, ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যুক্ত ব্যঞ্জনের প্রথম বর্ণের স্বর লুপ্ত হয়। যেমন— বাগ্মী (বাগ্মি), যুগ্ম (যুগ্মো), মৃন্ময় (মৃন্ময়), জন্ম (জন্মো), গুল্ম (গুল্মো)।
ব-ফলার উচ্চারণ:
▓ শব্দের প্রথমে ব-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে শুধু সে বর্ণের উপর অতিরিক্ত ঝোঁক পড়ে। যেমন— ক্বচিৎ (কোচিৎ), দ্বিত্ব (দিত্তো), শ্বাস (শাশ্), স্বজন (শজোন), দ্বন্দ্ব (দন্দো)।
▓ শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে যুক্ত ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন— বিশ্বাস (বিশ্শাশ্), পক্ব (পক্কো), অশ্ব (অশ্শো)।
▓ সন্ধিজাত শব্দে যুক্ত ব-ফলায় ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন— দিগ্বিজয় (দিগ্বিজয়), দিগ্বলয় (দিগ্বলয়)।
▓ শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘ব’ বা ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন— তিব্বত (তিব্বত), লম্ব (লম্বো)।
▓ উৎ উপসর্গের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বহাল থাকে। যেমন— উদ্বাস্তু (উদ্বাস্তু), উদ্বেল (উদ্বেল্)।
য-ফলার উচ্চারণ:
▓ য-ফলার পর ব্যঞ্জনধ্বনি বা অ, আ, ও ধ্বনি থাকলে য-ফলা ‘অ্যা’ উচ্চারিত হয়। যেমন— ব্যবহার (ব্যাবোহার্), ব্যস্ত (ব্যাস্তো) ইত্যাদি।
▓ য-ফলার পরে ‘ই’ ধ্বনি থাকলে য-ফলা ‘এ’ উচ্চারিত হয়। যেমন— ব্যক্তি (বেক্তি), ব্যতীত (বেতিতো) ইত্যাদি।
▓ য-ফলা শব্দের মাঝে বা শেষে থাকলে ‘দ্বিত্ব’ উচ্চারিত হয়। যেমন— বিদ্যুৎ (বিদ্দুত্), বিদ্যা (বিদ্দা) ইত্যাদি।
▓ শব্দের প্রথমে য-ফলার সাথে উ-কার, ঊ-কার, ও-কার থাকলে য-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন— দ্যুতি (দুতি), জ্যোতি (জোতি) ইত্যাদি।
▓ ▓ ‘হ’-এর পর য-ফলা থাকলে য-ফলা ‘জ্ঝ’ উচ্চারিত হয়। যেমন— সহ্য (শোজ্ঝো), গ্রাহ্য (গ্রাজ্ঝো) ইত্যাদি।
▓ ▓ উদ্যোগ শব্দটির উচ্চারণ বাংলায় দুটি পাওয়া যায়— উদ্দোগ ও উদ্জোগ। তবে জনমনে বেশি প্রচলিত উদ্দোগ। অনেকের মতে উদ্যোগকে যদি সংস্কৃত ভেঙে উদ্যোগ রূপে লেখা হয়—তবে এর উচ্চারণ উদ্জোগ হবে।
▓ ▓ য বা য-ফলার আদি বা সংস্কৃত উচ্চারণ ‘ইঅ (ইয়)’। যেমন— যামিনী (ইয়ামিনি), শ্যাম (শিয়াম) ইত্যাদি।
[দ্রষ্টব্য: আমাদের অবশ্যই বাংলা বানান ও বাংলা বানানের উচ্চারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কারণ বাংলা বানান ও উচ্চারণের পার্থক্য রয়েছে। যেমন— আছ (আছো), দেখা (দ্যাখা), একা (অ্যাকা) ইত্যাদি।]
--------------------------------------------------
যতিচিহ্ন:
ডট/ফুলস্টপ ( . )-এর ব্যবহার : ইংরেজি শব্দকে বাংলায় সংক্ষিপ্ত শব্দ রূপে লেখার ক্ষেত্রে ডট ব্যবহার হবে। যেমন— ড. (ডক্টর), লি. (লিমিটেড), মি. (মিস্টার) ইত্যাদি। ইংরেজিতে Govt. (Government), Ltd. (Limited), Mr. (Mister), Dr. (Doctor)। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপে (Abbreviation) ডট ব্যবহার না করাই ভালো। যেমন— SSC, HSC, SMS, MMS, BSS, BA, JSC, MPO, UN, BGB, BSF, RDRS, BRAC, BPL, IPL, ICC, BBC, WFP ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ডট ব্যবহার করা ভুল নয়, তবে আমাদের দ্বারা ভুলের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— BSc, PhD লিখতে গিয়ে B.S.C., P.H.D. লেখা। BSc, PhD-তে ডট ব্যবহার এভাবে হবে B.Sc., Ph.D. শুধু মাঝে ডট দিলে চলবে না যেমন— B.Sc, Ph.D অর্থাৎ Sc. ও D.-এর পরেও ডট হবে (অনুরূপ বাংলাতেও)। সুতরাং ভুল এড়াতে ডট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপ দ্বারা যদি শব্দ গঠন হয়, তাহলে এর মাঝে ডট ব্যবহার হবে না। যেমন— UNESCO, UNICEF. বাংলা বানানের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ডট বা হাইফেন ব্যবহার না করাই শ্রেয়। যেমন— এসএসসি, এইচএসসি, এসএমএস, এমএমএস, বিএ, বিকম, বিএসএস, বিএসসি, সি ইন এড, পিএইচডি, পিসি, আইসিসি, ইউএন, বিবিসি ইত্যাদি। বাংলায় ডট বা হাইফেন ব্যবহারে অনেক সময় ভুলের সৃষ্টিও হতে পারে। যথাসম্ভব এ ধরনের শব্দে হাইফেন ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এসব শব্দে কমা ( , ) ব্যবহার করা যাবে না।
কোলন ( : )-এর ব্যবহার:
▓ উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত বোঝাতে কোলন ব্যবহার হয়।
বাংলা সন্ধি দু প্রকার : স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।
▓ ব্যাখ্যামূলক/বিবরণমূলক শব্দে কোলন ব্যবহার হয়।
নাম: শামস
পিতার নাম: শামসুল
ঠিকানা: গ্রাম—পায়রাবন্দ, ডাকঘর— পায়রাবন্দ, উপজেলা— রংপুর, জেলা— রংপুর।
বিষয়: বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য আবেদন।
নিচ: নিচু, তল, নিচের দিক
নীচ: নিকৃষ্ট, হীন
▓ গাণিতিক ক্ষেত্রে কোলন ব্যবহার হয়।
১:৯ (অনুপাত)
▓ সময় ও তারিখে কোলন ব্যবহার হয়।
২:৩০ মিনিট
তারিখ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩
▓ নাটকের সংলাপের আগে কোলন ব্যবহার হয়।
দুকড়ি: কী চাই?
কাঙালি: আজ্ঞে, মহাশয় হচ্ছেন দেশহিতৈশী।
[দ্রষ্টব্য: ১ হতে ৪২ নং ক্রমিকগুলো লক্ষ্য করলে কোলনের ব্যবহার বুঝতে সুবিধা হবে। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে বিসর্গ আর কোলন এক নয়। বিসর্গ বাংলা বর্ণ; কোলন যতিচিহ্ন।]
হাইফেন/যুক্তচিহ্ন ( - )-এর ব্যবহার : সমাসবন্ধ পদে হাইফেন ব্যবহার হবে। যেমন— উপ-সহকারী, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম, মুহাম্মদ (সা.)-কে আল-আমিন বলা হতো, বিনোদ (২৮)-এর মৃত্যু, Sub-district, SMS-এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে, ISF-সহ, ৩-এর, ৫-সহ ইত্যাদি। এ ছাড়া শব্দকে ভেঙে দেওয়া ক্ষেত্রেও হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন— আন্ত-
র্জাতিক ইত্যাদি। হাইফেনের শুরুতে বা শেষে কোনো ফাঁকা (স্পেস) হবে না। অর্থাৎ দুটি শব্দকে একত্রে রাখবে।
ড্যাশ (—)-এর ব্যবহার: এম ড্যাশ (—) আকারে হাইফেনের তিনগুণ বড়। একই লাইনে বা, একই প্যারায় যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে দুই বা তারচেয়েও বেশি পৃথক বাক্য লেখার সময় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যেমন— তোমরা দরিদ্রের উপকার কর—এতে তোমাদের সম্মান যাবে না—বাড়বে। অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষেও ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন—
বাংলাদেশের রাজধানী হচ্ছে—
ক. চট্টগ্রাম খ. খুলনা গ. ঢাকা ঘ. রাজশাহী।
এন ড্যাশ (–) আকারে হাইফেনের দেড়গুণ বড়। সমার্থক ও বিপরীত ধর্মী শব্দে এন ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন— দেশি–বিদেশি, সত্য–মিথ্যা ইত্যাদি। এ ছাড়া থেকে বা হতে অর্থেও ব্যবহার হয়। যেমন— ১০–১২ বছর, ঢাকা–খুলনা ইত্যাদি। এ ধরনের শব্দে ইদানীং হাইফেন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
কোটেশন মার্ক/ইনভার্টেড কমা/উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘ ’ “ ” )-এর ব্যবহার : শব্দকে চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে একটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন— ‘সোনার তরি’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। উক্তিবাচক শব্দে দুটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হবে। যেমন— রেজা বলল, “আমি এখন স্কুলে যাই।”
অ্যাপস্ট্রফি/লোপচিহ্ন ( ’ )-এর ব্যবহার : শব্দকে সংক্ষিপ্তকরণেও এর ব্যবহার হয়। যেমন— ’৭১ সাল (১৯৭১ সাল), ’র (-এর) ইত্যাদি। ইংরেজিতে যেমন— I’m (I am), I’ll (I will or, I Shall). কবিতায় ছন্দের মিল রাখতে লোপচিহ্ন ব্যবহার হয়। বাংলা বানানে লোপচিহ্নের ব্যবহার যথাসম্ভব বর্জনীয়।
অবলিক/স্ল্যাশ/অথবা/বিকল্পচিহ্ন ( / )-এর ব্যবহার : বিকল্প শব্দের মাঝে অবলিক ( / ) বসে। সহজ কথায় এটা নয় ওটা এরূপ বোঝাতে অবলিক ব্যবহার হয়। যেমন—
বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত/অবিবাহিত ইত্যাদি। যেখানে দু-ই বিদ্যমান যেখানে বিকল্পচিহ্ন ব্যবহার হবে না। যেমন— বিদ্যালয়ে শিক্ষক/কর্মচারী সংখ্যা কম বা, ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। শুদ্ধরূপ হচ্ছে— শিক্ষক–কমচারী ও ছাত্র–ছাত্রী (ছাত্রছাত্রী)।
স্মারক ও তারিখে অবলিক ব্যবহার হয়। যেমন— ঢাবি/পরী/২০১২-১৩, তারিখ- ১২/১২/২০১২খ্রি.। ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে লেখার সময় বলা হয় স্ল্যাশ।
যতিচিহ্নের কিছু অশুদ্ধ ও শুদ্ধ ব্যবহার :
চিহ্নের নাম>>>>>> শুদ্ধ >>>> অশুদ্ধ
কোলন >>>>>>> ( : ) >>>>( ঃ )
কোলন-ড্যাশ >>> ( :— ) >>> (ঃ- )
ড্যাশ>>>>>>>> ( — )>>>> ( - )
হাইফেন >>>>>> ( - ) >>>> ( — )
অশুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা/২০১২, ২০১২/১৩ শিক্ষাবর্ষ, ২০১২/১৩ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি/২০১২ ইত্যাদি।
শুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা ২০১২ অথবা, পরীক্ষা–২০১২, ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষ, ২০১২–১৩ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি ২০১২।
বিসর্গ একটি বাংলা বর্ণ—এটি কোনো চিহ্ন নয়। বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বিসর্গ (ঃ) হলো অঘোষ 'হ্'-এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি। 'হ'-এর উচ্চারণ ঘোষ কিন্তু বিসর্গ (ঃ)-এর উচ্চারণ অঘোষ। বাংলায় ভাষায় বিস্ময়াদি প্রকাশে বিসর্গ (ঃ )-এর উচ্চারণ প্রকাশ পায়। যেমন— আঃ, উঃ, ওঃ, ছিঃ, বাঃ । পদের শেষে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার হবে না।
যেমন— ধর্মত, কার্যত, আইনত, ন্যায়ত, করত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদি। পদমধ্যস্থে বিসর্গ ব্যবহার হবে। যেমন— অতঃপর, দুঃখ, স্বতঃস্ফূর্ত, অন্তঃস্থল, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
শব্দকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশে বিসর্গ ব্যবহার করা হলেও আধুনিক বানানে ডট ( . ) ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন— ডাক্তার>ডা., ডক্টর>ড., লিমিটেড> লি. ইত্যাদি। বিসর্গ যেহেতু বাংলা বর্ণ এবং এর নিজস্ব ব্যবহার বিধি আছে—তাই এ ধরনের বানানে (ডাক্তার>ডা., ডক্টর>ড., লিমিটেড> লি.) বিসর্গ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ বিসর্গ যতিচিহ্ন নয়।
[সতর্কীকরণ: বিসর্গ (ঃ)-এর স্থলে কোলন ( : ) কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। যেমন— অত:পর, দু:খ ইত্যাদি। কারণ কোলন ( : ) কোনো বর্ণ নয়, চিহ্ন। যতিচিহ্ন হিসেবে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার যাবে না। যেমন— নামঃ রেজা, থানাঃ লাকসাম, জেলাঃ কুমিল্লা, ১ঃ৯ ইত্যাদি।]
বিসর্গসন্ধি:
বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম :
১. র্ -জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়। উচ্চারণে র্ বজায় থাকে। যেমন— অন্তর>অন্তঃ+গত=অন্তর্গত ( অন্তোর্গতো)।
২. স্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়। উচ্চারণে স্ বজায় থাকে। যেমন : নমস্ > নমঃ + কার = নমস্কার ( নমোশ্কার্)।
বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় : ১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে; ২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে।
১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি:
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়। যেমন—
ততঃ + অধিক = ততোধিক
যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ
বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক
খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, আ, উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়। যেমন—
পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার
প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি
পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (র্) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমন—
র-জাত বিসর্গ : র্
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত
পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম
অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান
পুনঃ + বার = পুনর্বার
অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত
পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন
স-জাত বিসর্গ : ও
মনঃ + গত = মনোগত
সদ্যঃ + জাত = সদ্যোজাত
তিরঃ + ধান = তিরোধান
তপঃ + বন = তপোবন
অধঃ + মুখ = অধোমুখ
মনঃ + যোগ = মনোযোগ
মনঃ + রম = মনোরম
মনঃ + লোভা = মনোলোভা
মনঃ + হর = মনোহর
খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমন—
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয়
দুঃ + তর = দুস্তর
নিঃ + তেজ = নিস্তেজ
ইতঃ + তত = ইতস্তত
দুঃ + থ = দুস্থ
গ. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমন—
নিঃ + অবধি = নিরবধি
নিঃ + আপদ = নিরাপদ
নিঃ + গত = নির্গত
নিঃ + ঘণ্ট = নির্ঘণ্ট
নিঃ + বাক = নির্বাক
নিঃ + ভয় = নির্ভয়
আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব
আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ
দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা
দুঃ + আচার = দুরাচার
দুঃ + গতি = দুর্গতি
দুঃ + বোধ = দুর্বোধ
প্রাদুঃ + ভাব = প্রাদুর্ভাব
দুঃ + মর = দুর্মর
দুঃ + যোগ = দুর্যোগ
দুঃ + লভ = দুর্লভ
ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথমে ই-কার থাকলে তা ঈ-কার হয়। যেমন—
নিঃ + রব = নীরব
নিঃ + রস = নীরস
নিঃ + রোগ = নীরোগ
ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়। যেমন—
নমঃ + কার = নমস্কার
তিরঃ + কার = তিরস্কার
পুরঃ + কার = পুরস্কার
ভাঃ + কর = ভাস্কর
চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়। যেমন—
নিঃ + কাম = নিষ্কাম
নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ
নিঃ + ফল = নিষ্ফল
বহিঃ + কার = বহিষ্কার
চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ
চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ
ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না। যেমন—
প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া
অন্তঃ + করণ = অন্তঃকরণ
৪২. ম-ফলা, ব-ফলার ও য-ফলার উচ্চারণ:
ম-ফলার উচ্চারণ:
▓ পদের প্রমে ম-ফলা থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন— শ্মশান (শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্)।
কখনো কখনো ‘ম’ অনুচ্চারিত থাকতে ও পারে। যেমন— স্মৃতি (সৃতি বা সৃঁতি)।
▓ পদের মধ্যে বা শেষে ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে সে বর্ণের দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন— আত্মীয় (আত্তিঁয়), পদ্ম (পদ্দোঁ), বিস্ময় (বিশ্শঁয়), ভস্মস্তূপ (ভশ্শোঁস্তুপ্), ভস্ম (ভশ্শোঁ), রশ্মি (রোশ্শিঁ)।
▓ গ, ঙ, ট, ণ, ন, বা ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে, ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যুক্ত ব্যঞ্জনের প্রথম বর্ণের স্বর লুপ্ত হয়। যেমন— বাগ্মী (বাগ্মি), যুগ্ম (যুগ্মো), মৃন্ময় (মৃন্ময়), জন্ম (জন্মো), গুল্ম (গুল্মো)।
ব-ফলার উচ্চারণ:
▓ শব্দের প্রথমে ব-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে শুধু সে বর্ণের উপর অতিরিক্ত ঝোঁক পড়ে। যেমন— ক্বচিৎ (কোচিৎ), দ্বিত্ব (দিত্তো), শ্বাস (শাশ্), স্বজন (শজোন), দ্বন্দ্ব (দন্দো)।
▓ শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে যুক্ত ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন— বিশ্বাস (বিশ্শাশ্), পক্ব (পক্কো), অশ্ব (অশ্শো)।
▓ সন্ধিজাত শব্দে যুক্ত ব-ফলায় ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন— দিগ্বিজয় (দিগ্বিজয়), দিগ্বলয় (দিগ্বলয়)।
▓ শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘ব’ বা ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন— তিব্বত (তিব্বত), লম্ব (লম্বো)।
▓ উৎ উপসর্গের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বহাল থাকে। যেমন— উদ্বাস্তু (উদ্বাস্তু), উদ্বেল (উদ্বেল্)।
য-ফলার উচ্চারণ:
▓ য-ফলার পর ব্যঞ্জনধ্বনি বা অ, আ, ও ধ্বনি থাকলে য-ফলা ‘অ্যা’ উচ্চারিত হয়। যেমন— ব্যবহার (ব্যাবোহার্), ব্যস্ত (ব্যাস্তো) ইত্যাদি।
▓ য-ফলার পরে ‘ই’ ধ্বনি থাকলে য-ফলা ‘এ’ উচ্চারিত হয়। যেমন— ব্যক্তি (বেক্তি), ব্যতীত (বেতিতো) ইত্যাদি।
▓ য-ফলা শব্দের মাঝে বা শেষে থাকলে ‘দ্বিত্ব’ উচ্চারিত হয়। যেমন— বিদ্যুৎ (বিদ্দুত্), বিদ্যা (বিদ্দা) ইত্যাদি।
▓ শব্দের প্রথমে য-ফলার সাথে উ-কার, ঊ-কার, ও-কার থাকলে য-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন— দ্যুতি (দুতি), জ্যোতি (জোতি) ইত্যাদি।
▓ ▓ ‘হ’-এর পর য-ফলা থাকলে য-ফলা ‘জ্ঝ’ উচ্চারিত হয়। যেমন— সহ্য (শোজ্ঝো), গ্রাহ্য (গ্রাজ্ঝো) ইত্যাদি।
▓ ▓ উদ্যোগ শব্দটির উচ্চারণ বাংলায় দুটি পাওয়া যায়— উদ্দোগ ও উদ্জোগ। তবে জনমনে বেশি প্রচলিত উদ্দোগ। অনেকের মতে উদ্যোগকে যদি সংস্কৃত ভেঙে উদ্যোগ রূপে লেখা হয়—তবে এর উচ্চারণ উদ্জোগ হবে।
▓ ▓ য বা য-ফলার আদি বা সংস্কৃত উচ্চারণ ‘ইঅ (ইয়)’। যেমন— যামিনী (ইয়ামিনি), শ্যাম (শিয়াম) ইত্যাদি।
[দ্রষ্টব্য: আমাদের অবশ্যই বাংলা বানান ও বাংলা বানানের উচ্চারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কারণ বাংলা বানান ও উচ্চারণের পার্থক্য রয়েছে। যেমন— আছ (আছো), দেখা (দ্যাখা), একা (অ্যাকা) ইত্যাদি।]
--------------------------------------------------
যতিচিহ্ন:
ডট/ফুলস্টপ ( . )-এর ব্যবহার : ইংরেজি শব্দকে বাংলায় সংক্ষিপ্ত শব্দ রূপে লেখার ক্ষেত্রে ডট ব্যবহার হবে। যেমন— ড. (ডক্টর), লি. (লিমিটেড), মি. (মিস্টার) ইত্যাদি। ইংরেজিতে Govt. (Government), Ltd. (Limited), Mr. (Mister), Dr. (Doctor)। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপে (Abbreviation) ডট ব্যবহার না করাই ভালো। যেমন— SSC, HSC, SMS, MMS, BSS, BA, JSC, MPO, UN, BGB, BSF, RDRS, BRAC, BPL, IPL, ICC, BBC, WFP ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ডট ব্যবহার করা ভুল নয়, তবে আমাদের দ্বারা ভুলের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— BSc, PhD লিখতে গিয়ে B.S.C., P.H.D. লেখা। BSc, PhD-তে ডট ব্যবহার এভাবে হবে B.Sc., Ph.D. শুধু মাঝে ডট দিলে চলবে না যেমন— B.Sc, Ph.D অর্থাৎ Sc. ও D.-এর পরেও ডট হবে (অনুরূপ বাংলাতেও)। সুতরাং ভুল এড়াতে ডট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপ দ্বারা যদি শব্দ গঠন হয়, তাহলে এর মাঝে ডট ব্যবহার হবে না। যেমন— UNESCO, UNICEF. বাংলা বানানের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ডট বা হাইফেন ব্যবহার না করাই শ্রেয়। যেমন— এসএসসি, এইচএসসি, এসএমএস, এমএমএস, বিএ, বিকম, বিএসএস, বিএসসি, সি ইন এড, পিএইচডি, পিসি, আইসিসি, ইউএন, বিবিসি ইত্যাদি। বাংলায় ডট বা হাইফেন ব্যবহারে অনেক সময় ভুলের সৃষ্টিও হতে পারে। যথাসম্ভব এ ধরনের শব্দে হাইফেন ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এসব শব্দে কমা ( , ) ব্যবহার করা যাবে না।
কোলন ( : )-এর ব্যবহার:
▓ উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত বোঝাতে কোলন ব্যবহার হয়।
বাংলা সন্ধি দু প্রকার : স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।
▓ ব্যাখ্যামূলক/বিবরণমূলক শব্দে কোলন ব্যবহার হয়।
নাম: শামস
পিতার নাম: শামসুল
ঠিকানা: গ্রাম—পায়রাবন্দ, ডাকঘর— পায়রাবন্দ, উপজেলা— রংপুর, জেলা— রংপুর।
বিষয়: বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য আবেদন।
নিচ: নিচু, তল, নিচের দিক
নীচ: নিকৃষ্ট, হীন
▓ গাণিতিক ক্ষেত্রে কোলন ব্যবহার হয়।
১:৯ (অনুপাত)
▓ সময় ও তারিখে কোলন ব্যবহার হয়।
২:৩০ মিনিট
তারিখ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩
▓ নাটকের সংলাপের আগে কোলন ব্যবহার হয়।
দুকড়ি: কী চাই?
কাঙালি: আজ্ঞে, মহাশয় হচ্ছেন দেশহিতৈশী।
[দ্রষ্টব্য: ১ হতে ৪২ নং ক্রমিকগুলো লক্ষ্য করলে কোলনের ব্যবহার বুঝতে সুবিধা হবে। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে বিসর্গ আর কোলন এক নয়। বিসর্গ বাংলা বর্ণ; কোলন যতিচিহ্ন।]
হাইফেন/যুক্তচিহ্ন ( - )-এর ব্যবহার : সমাসবন্ধ পদে হাইফেন ব্যবহার হবে। যেমন— উপ-সহকারী, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম, মুহাম্মদ (সা.)-কে আল-আমিন বলা হতো, বিনোদ (২৮)-এর মৃত্যু, Sub-district, SMS-এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে, ISF-সহ, ৩-এর, ৫-সহ ইত্যাদি। এ ছাড়া শব্দকে ভেঙে দেওয়া ক্ষেত্রেও হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন— আন্ত-
র্জাতিক ইত্যাদি। হাইফেনের শুরুতে বা শেষে কোনো ফাঁকা (স্পেস) হবে না। অর্থাৎ দুটি শব্দকে একত্রে রাখবে।
ড্যাশ (—)-এর ব্যবহার: এম ড্যাশ (—) আকারে হাইফেনের তিনগুণ বড়। একই লাইনে বা, একই প্যারায় যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে দুই বা তারচেয়েও বেশি পৃথক বাক্য লেখার সময় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যেমন— তোমরা দরিদ্রের উপকার কর—এতে তোমাদের সম্মান যাবে না—বাড়বে। অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষেও ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন—
বাংলাদেশের রাজধানী হচ্ছে—
ক. চট্টগ্রাম খ. খুলনা গ. ঢাকা ঘ. রাজশাহী।
এন ড্যাশ (–) আকারে হাইফেনের দেড়গুণ বড়। সমার্থক ও বিপরীত ধর্মী শব্দে এন ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন— দেশি–বিদেশি, সত্য–মিথ্যা ইত্যাদি। এ ছাড়া থেকে বা হতে অর্থেও ব্যবহার হয়। যেমন— ১০–১২ বছর, ঢাকা–খুলনা ইত্যাদি। এ ধরনের শব্দে ইদানীং হাইফেন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
কোটেশন মার্ক/ইনভার্টেড কমা/উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘ ’ “ ” )-এর ব্যবহার : শব্দকে চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে একটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন— ‘সোনার তরি’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। উক্তিবাচক শব্দে দুটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হবে। যেমন— রেজা বলল, “আমি এখন স্কুলে যাই।”
অ্যাপস্ট্রফি/লোপচিহ্ন ( ’ )-এর ব্যবহার : শব্দকে সংক্ষিপ্তকরণেও এর ব্যবহার হয়। যেমন— ’৭১ সাল (১৯৭১ সাল), ’র (-এর) ইত্যাদি। ইংরেজিতে যেমন— I’m (I am), I’ll (I will or, I Shall). কবিতায় ছন্দের মিল রাখতে লোপচিহ্ন ব্যবহার হয়। বাংলা বানানে লোপচিহ্নের ব্যবহার যথাসম্ভব বর্জনীয়।
অবলিক/স্ল্যাশ/অথবা/বিকল্পচিহ্ন ( / )-এর ব্যবহার : বিকল্প শব্দের মাঝে অবলিক ( / ) বসে। সহজ কথায় এটা নয় ওটা এরূপ বোঝাতে অবলিক ব্যবহার হয়। যেমন—
বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত/অবিবাহিত ইত্যাদি। যেখানে দু-ই বিদ্যমান যেখানে বিকল্পচিহ্ন ব্যবহার হবে না। যেমন— বিদ্যালয়ে শিক্ষক/কর্মচারী সংখ্যা কম বা, ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। শুদ্ধরূপ হচ্ছে— শিক্ষক–কমচারী ও ছাত্র–ছাত্রী (ছাত্রছাত্রী)।
স্মারক ও তারিখে অবলিক ব্যবহার হয়। যেমন— ঢাবি/পরী/২০১২-১৩, তারিখ- ১২/১২/২০১২খ্রি.। ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে লেখার সময় বলা হয় স্ল্যাশ।
যতিচিহ্নের কিছু অশুদ্ধ ও শুদ্ধ ব্যবহার :
চিহ্নের নাম>>>>>> শুদ্ধ >>>> অশুদ্ধ
কোলন >>>>>>> ( : ) >>>>( ঃ )
কোলন-ড্যাশ >>> ( :— ) >>> (ঃ- )
ড্যাশ>>>>>>>> ( — )>>>> ( - )
হাইফেন >>>>>> ( - ) >>>> ( — )
অশুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা/২০১২, ২০১২/১৩ শিক্ষাবর্ষ, ২০১২/১৩ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি/২০১২ ইত্যাদি।
শুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা ২০১২ অথবা, পরীক্ষা–২০১২, ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষ, ২০১২–১৩ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি ২০১২।
No comments:
Post a Comment